জমি কেনার আগে ও পরে করণীয়: কীভাবে সঠিকভাবে জমি কিনবেন
জমি কেনা জীবনের অন্যতম বড় বিনিয়োগ। এটি একদিকে যেমন স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার, তেমনি সঠিকভাবে না করলে সমস্যার কারণ হতে পারে। জমি কেনার আগে ও পরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় যা ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা থেকে বাঁচাতে পারে।
জমি কেনার আগে করণীয়
- প্রয়োজনীয় দলিলপত্র যাচাই করুন: জমি কেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই যা করতে হবে, তা হলো জমির দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই। জমির দলিলের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে বিক্রেতা আসল মালিক কিনা এবং জমির ওপর কোনো মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে কিনা।
- জমির খতিয়ান ও পর্চা পরীক্ষা করুন: জমির খতিয়ান এবং পর্চা পরীক্ষার মাধ্যমে জমির আসল মালিকানার ইতিহাস জানা যায়। এটা নিশ্চিত করবেন যে জমির খতিয়ান আপডেট এবং প্রয়োজনীয়তানুযায়ী ঠিক আছে কিনা।
- জমির পরিমাপ ও সীমানা নির্ধারণ করুন: জমি কেনার আগে জমির সঠিক পরিমাপ এবং সীমানা নিশ্চিত করতে হবে। কখনও কখনও জমির মালিকানা বা সীমানা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়, যা জমি ক্রয়ের পর সমস্যায় পরিণত হতে পারে।
- সরকারি অনুমতি ও জোনিং নিয়মাবলী জেনে নিন: জমি কিনতে গেলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ম-কানুন জানতে হবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ জমি কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে কিনা বা কোনো সরকারী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
- জমির অবস্থান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: জমির অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্ভাবনা পর্যালোচনা করা জরুরি। আপনি জমি কোথায় কিনছেন এবং সেখানে ভবিষ্যতে উন্নয়ন ঘটবে কিনা তা বুঝতে হবে।
জমি কেনার পরে করণীয়
- দলিল রেজিস্ট্রি করা: জমি কেনার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জমির দলিল রেজিস্ট্রি করা। সরকারীভাবে জমির মালিকানা নিবন্ধিত না করলে ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় সরকারী ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশনের খরচ ভালোভাবে বুঝে নিন।
- জমি নামজারি করা: দলিল রেজিস্ট্রি করার পর জমির নামজারি (Mutation) করতে হবে। এটি সরকারি নথিপত্রে আপনার নামে জমি হস্তান্তর নিশ্চিত করে। নামজারি না করলে আপনার জমির মালিকানা বৈধভাবে স্থায়ী হবে না।
- জমির সীমানা স্থাপন করুন: জমির মালিকানা নেওয়ার পর সঠিক সীমানা চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজন হলে সীমানা নির্ধারণের জন্য পেশাদার সাভেয়ার নিয়োগ করতে পারেন। সীমানা স্পষ্ট না হলে ভবিষ্যতে প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধ হতে পারে।
- জমির দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণ: জমি কেনার পর সেটির সঠিক দেখভাল করতে হবে। যদি জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা থাকে, তবে সঠিক অনুমোদন নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। এছাড়া জমির ওপর কর (Land Tax) সঠিকভাবে পরিশোধ করতে হবে।
- আইনগত নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় বীমা: জমি কেনার পরে আইনগত নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। জমি নিয়ে যদি কোনো বিরোধ দেখা দেয়, তবে আইনগত পরামর্শ নিন। এছাড়া, জমির ওপর কোনো নির্মাণ কাজ শুরু করলে সঠিক বীমা নেয়া উচিত, যা ভবিষ্যতের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেবে।
উপসংহার
জমি কেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। তাই জমি কেনার আগে সঠিক তদন্ত ও কাগজপত্র যাচাই করা প্রয়োজন এবং কেনার পরে সঠিক রেজিস্ট্রি, নামজারি ও সীমানা নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো মেনে চললে জমি কেনার পরে কোনো প্রকার ঝুঁকি বা সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
আইটি ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url