স্ট্রোক হলে কি করবেন: জরুরি করণীয় পদক্ষেপ ও প্রতিরোধের উপায়
স্ট্রোক হলো একটি জরুরি শারীরিক অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের কোষগুলি অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে শুরু করে। স্ট্রোক দ্রুত চিকিৎসা না করলে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে, যা প্যারালাইসিস থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করা এবং জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো চিনে নিন
স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যা দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এগুলো হলো:
- মুখের একপাশ ঝুলে পড়া
- হাত বা পায়ের দুর্বলতা
- বাকশক্তি হারানো
- চোখে ঝাপসা দেখা
- হঠাৎ মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো
স্ট্রোক হলে করণীয় জরুরি পদক্ষেপ
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত:
১. জরুরি চিকিৎসা সহায়তা নিন
যখনই স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তখনই দ্রুত চিকিৎসা সহায়তার জন্য 999-এ ফোন করুন বা নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ, তাই দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
২. ব্যক্তিকে শুয়ে দিন
স্ট্রোকের রোগীকে শুয়ে রাখুন, বিশেষ করে মাথাটি সামান্য উঁচুতে রাখতে হবে। এতে রক্তপ্রবাহ সঠিকভাবে হতে পারে। রোগীকে আরামদায়কভাবে শুয়ে রাখার চেষ্টা করুন এবং তাকে স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য করবেন না।
৩. কথা বলার চেষ্টা করুন
রোগীর সাথে শান্তভাবে কথা বলুন এবং তাকে কোনো চাপ দেবেন না। রোগীকে প্রশ্ন করুন, যাতে তার বাকশক্তি আছে কি না এবং বুঝতে পারছে কি না তা যাচাই করতে পারেন।
৪. ওষুধের প্রয়োজনীয়তা বুঝুন
যদি রোগী স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত ওষুধ নিয়ে থাকেন, তবে ওষুধটি সঙ্গে থাকলে দিতে পারেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো নতুন ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না।
৫. রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ করুন
রোগী শ্বাস নিতে পারছে কি না, তা মনিটর করতে হবে। যদি রোগী শ্বাস নিতে সমস্যা করে, তবে CPR দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। CPR কিভাবে দিতে হয় তা যদি না জানেন, তবে পেশাদার সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করুন।
৬. অতিরিক্ত তাপ বা ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখুন
রোগীকে খুব ঠাণ্ডা বা খুব গরম পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে। অতিরিক্ত তাপ বা ঠাণ্ডা রোগীর অবস্থাকে আরও খারাপ করতে পারে।
স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়
যদিও স্ট্রোক হঠাৎ করে হতে পারে, তবে কিছু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ মেনে চললে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব:
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
- ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
- মানসিক চাপ কমানো
উপসংহার
স্ট্রোক হলো জীবন-মরণ সমস্যার একটি অন্যতম বড় কারণ। তাই স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ চিনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। জরুরি চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া, প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়গুলো মেনে চললে এই মারাত্মক রোগ থেকে অনেকাংশে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। আপনার স্বাস্থ্যই আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ, তাই সচেতন হোন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
আইটি ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url